ফিরে গেলে তোমার সাথে আমার এমন করে হঠাৎ কোন একদিন দেখা হয়ে যাবে তা আমি জানতাম, তাই হয়তো ফিরে যাওয়ার ইচ্ছেটা আমার কখনোই ছিলনা । তারপরও আমার ফিরে যেতে হলো, খোলা আকাশে উড়ে যাওয়া পাখিটাকেও সন্ধ্যায় নীরে ফিরতে হয় আর আমিতো সামান্য এক মানবী আমি কেমন করে পালিয়ে থাকবো আমার দেহের সব অনুতে মিশে থাকা ওই ঘর থেকে । সেদিন তোমাকে দেখে আমার বুকের ভিতরটা যে কেপে উঠেনি তা কিন্তু না । ঠিক কেপে উঠেছে তবে ঐ কাপনটা কোন আবেগ বা ভাললাগার ছিলনা তোমার দেয়া ভয়াল রাতগুলো মনে পড়েই আবারো আমার ভিতরটা কুকড়ে যাচ্ছিল তাই হয়তো ।
তোমাকে নিয়ে গল্পটা আমার অনেকদিন ধরেই লিখবো লিখবো ভাবছিলাম, আজ যখন লিখতে শুরু করেছি তখন পুরোটাই লিখি । বয়স তখন আমার অনেক কম, অতিরিক্ত দুষ্টামি আর ড্যাম কেয়ার ভাবটার জন্য এলাকার অনেকের চোখেই আমি পড়তে শুরু করেছি। সেই অনেকের মাঝে তুমিও ছিলে । প্রথম দেখাটা আমাদের বেশ নাটকীয় ভাবেই হয়েছে তাইনা ? তোমার কোন এক আত্মীয় আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতো , তুমি তাদের বাসায় ঘুরতে এলে। আমার কিন্তু তখন এত কিছু জানা ছিলনা সেই মুহূর্তটাতে আমি তীর ধনুক বানিয়ে তা দিয়ে পাশের একটা গাছ থেকে কামরাঙা ফেলার চেষ্টায় ব্যাস্ত । ভাবিনি যে তিনতলার জানালা থেকে একজোড়া চোখ আমাকে অনুসরন করে নিজে নিজেই হাসছে । এসবি কিন্তু পরে আমার তোমার কাছ থেকে জানা, দ্বিতীয়বার দেখা হয়েছে আমার এক বন্ধুর বোনের বিয়েতে । এত মানুষের ভিড়ে তখনো কিন্তু আমার তোমাকে চোখে পড়েনি । তুমি কেমন করে এত মানুষের মাঝে আমাকে খেয়াল করলে আমি জানিনা ।
কল করলে তুমি আমাকে, এবং সবসময়ের মতই আমাকে সহজে বোকা বানিয়ে ফেললে । বললে তুমি বোর্ডের অঙ্কের টিচার । আমি গাধাও বিশ্বাস করে ঘরের সবাইকে ছুটে গিয়ে বলার পরই বুঝতে পারলাম আমি বুদ্ধ হয়েছি । তারপরও তোমাকে আমার ভাললাগতে লাগলো । আমাকে ভালবাসতো যারা তারা তোমাকে কিছুতেই পছন্দ করতে পারলোনা, হঠাৎ করেই বাইরে থেকে একজন উড়ে এসে জুড়ে বসে তাদের ভাললাগার মানুষটাকে দখল করবে এটা হয়তো কিছুতেই মানতে পারছিলনা । আমি কারো কথায়ই কান দেইনি । নিজের ভাললাগা আর আবেগের খেয়ালে চলেছি মুহূর্তগুলো । ব্যাস্ত ছিলাম খুব তোমাকে নিয়ে , আস্তে আস্তে আমার কাছের প্রায় মানুষগুলো দূরে সরতে লাগলো আমি দেখেও না দেখলাম । তোমার আমার সম্পর্কে রাজি হওয়ার পর আমি সেই সব মানুষের কাছ থেকে পুরোই ছুটি নিয়ে নিলাম, বললাম আর কারো সাথে থাকতে চাইনা । তুমিই যথেষ্ট - এত বোকা কেন ছিলাম আমি !
ছাদটা আমার ভীষণ প্রিয় ছিল,জিন্স আর টপস পরে চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে ছাদের কার্নিশে হাটতে ভীষণ ভাল লাগত আমার । ভীষণ হাওয়ায় যখন চুল উড়তো আমার কেন যেন মনে হতো পাখির মত আমারও বুঝি ডানা গজিয়েছে উড়ে যেতে পারবো হয়তো এখুনি দূরের কোন দেশে । সেই কার্নিশে হাটতে হাটতে হঠাৎ যখন তুমি এই ঢঙি বলে ডাক দিলে কিযে ভীষণ লজ্জা পেয়েছিলাম আমি সাথে সাথেই দেয়াল টপকে ছাদের ভিতরটায় পালিয়েছিলাম । সেদিন বুঝতে পারলাম আমার এই ভাললাগার জগতটায় এখন আমি আর একা নেই, অন্য কেউ ঢুকার চেষ্টা করছে আমার সবঘরেই । তারপরও কেন আমি সাবধান হইনি আমি ! নিজেকে দোষ দেয়া ছাড়া আমি এখন আর আলোই দেখতে পাইনা জানো ।
তোমার সাথে বন্ধুত্বের সময়টাতে তুমি গীটার কিনে দিলে আমাকে, কিছুতেই আমার না শুনলেনা । বাধ্য হয়েই নিলাম, সেই গীটারে প্রথম সুর তুলতে শিখলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে কিন্তু নিজের জড়তা কাটিয়ে কখনো তোমাকে বলা হয়নি আমি গানের সুর তুলতে শিখেছি । সেই গীটার এখন স্টোরেজের কোন কর্নারে নিশ্চয় আধাভাঙ্গা হয়ে পড়ে আছে । তোমার দেয়া সব উপহারই আমি ফেলে দিয়েছি কিন্তু এই গীটারটা ফেলতে ভীষণ মায়া হলো, এই গীটারটাইতো আমাদের শুভ্র বন্ধুত্ব থাকার সময়ের একমাত্র স্মৃতি । তাই স্টোরজের অন্ধকার ঘরটাতেই বন্দী করলাম, কোন একদিন হয়তো বের করে ফেলে দিয়ে আসবো ।
তোমাকে কি আমি ভালবাসতাম ? কে জানে হয়তো বাসতাম নাহয় সব ছেড়ে তোমার সাথে চলে যেতে রাজি কেন হয়েছিলাম ! তবে আমার ভালবাসাটা কোনরকম কদাকার ছায়া ছাড়া ভীষণ পবিত্র রকমের ছিল কিন্তু সেই ভালবাসায় তুমি ধীরে ধীরে কলঙ্ক ছড়ালে । নিজের শুদ্ধ ভালবাসায় দাগ পড়তে দেখে সহ্য করতে না পারাই হয়তো তোমার কাছ থেকে আমাকে দূরে ঠেলে দেয়ার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল ।
তোমাকে নিয়ে লিখতে বসে আজ বার বার হাত আটকে যাচ্ছে আমার, কে জানে নিজের জীবনের গল্প বলেই হয়তো এমন করে বার বার চোখের জলে ঝাপসা হয়ে আসছে আমার সামনের স্ক্রিনটা ।
সত্যি আমার জীবনে তুমি অশুভ ছায়া ছাড়া আর কিছুই না এখন, অন্ধকার ভয়াল অতীত । ক্ষমতা থাকলে অবশ্যই আমি সেই আশ্চর্য ইরেজার দিয়ে মুছে ফেলতাম তোমার সাথে পরিচয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত । সারাক্ষণ হাসতে থাকা আমার এখন হাসতে একদমি ভাল লাগেনা । একসময় আমার হাসির প্রেমে পড়া মানুষগুলো খুব অবাক হয়ে ইদানিং জিজ্ঞেস করে এত বদলে গেছে কেন আমার হাসি । কি বলবো আমি ! বলতে পারিনা হাসতে ভুলে গেছি সেই কবে ! এখনতো রাবারের হাসি ছাড়া দেয়ার মত আর কিছুই নেই আমার । কেয়ারলেস হাসতে থাকা আমিটাকে তুমি নিজ হাতে গলা টিপে মেরেছ । চারতলা ছাদের উপরের ছোট্ট ছাদটাতে পানির টাঙ্কির উপর উঠে ঘুমিয়ে পড়া আমি এখন উচ্চতা ভয় পাই, সেখানে পা ঝুলিয়ে বসে বসে গল্পের বই পড়া আমার এখন একতলা থেকে নিচে তাকাতে ভয় করে ।বাসার চারপাশের দেয়ালে রাতে চুপি চুপি হেটে বেড়ানো আমার এখন দরজার বাইরে একা পা রাখতে ভয় করে । এতটা বদলে গেছি আমি যে নিজেকে নিজেই চিনতে পারিনা ।
তবে সবকিছু যে খারাপ হয়েছিল তা কিন্তু না, তোমার কারণেই আমি বুঝতে শিখেছি পুরুষ নামের প্রানীগুলো থেকে সবসময় দূরে থাকতে । ভুল করে যদি কখনো বিশ্বাস করে ফেলি তাহলে পস্তাতে হবে আবারো আমাকে আগের মতই- তাই হয়তো ভালবাসাটাও আমি বিশ্বাস করতে ভুলে গেছি সেই ফেলে আসা সময়ে ।
তোমাকে নিয়ে লিখতে গেলে গল্পটা হয়তো আরো অনেক বড় হয়ে যাবে, কিন্তু আমি আর পারছিনা ভীষণ ক্লান্ত আমি । লিখাগুলোর দিকে তাকিয়ে মাথাটা ধরে আসছে , মনে হচ্ছে কপাল থেকে শুরু হয়ে সারা শরীরে বিষের মত অনুভব করছি আমি মাথার ব্যাথা ...