Sunday, June 28, 2015

মধ্যাহ্নের আকাশ

সামনেই অধরার পরীক্ষা, পরীক্ষার সময় রাত জেগে পড়াটা অধরার ছোট বেলার অভ্যাস কিন্তু অধরা আজ জেগে থাকবেনা কারণ অধরা জানে ও জেগে থাকলে তামীমও জেগে থাকবে । ফোনের ওপাশে একলা একলা অধরার সাথে জেগে রাত কাটিয়ে দিবে । তাই অধরা তাড়াতাড়িই ঘুমোতে বিছানায় যায় , যদি ভোরে উঠে পড়তে পারে একটু ।

 অধরা একদমি মিথ্যে  বলতে পারে না, ও প্রায় ভাবে মিথ্যে বলতে পারলে হয়তো ভালই হতো । অন্তত এই সময়গুলোতে । ও না ঘুমালেও মিথ্যে বলে তামীমকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া যেত । খাওয়ার সময় না থাকায় খেতে না পারলেও তামীমকে খেতে বাধ্য করতে পারত কিন্তু এখন কিছুই হয়না, তামীম খাচ্ছেনা অধরার অপেক্ষায় বসে আছে । তাই অধরা সব কাজ ফেলে ছুট লাগায় কিন্তু অধরার কাছে তামীমের এই ব্যাপারগুলো ভীষণ ভাললাগার । যতবার তামীম এমন বাচ্চাদের মত জিদ করে ওর কাছে মনে হয় ও বুঝি আবারো নতুন করে তামীমের প্রেমে পড়েছে ।

তামীমের সাথে অধরার পরিচয় রাস্তার ওপাশের ছোট্ট ক্যাফেটায়। অধরা আরো চারটা মেয়ের সাথে মেস করে থাকে কিন্তু ভোরে ভোরে উঠে চা বানাতে ওর কখনো ইচ্ছে করে না তাই প্রায় দিন সকালেই ওখানে চা খেতে যায় অধরা । আর তামীমও ছিলো সেই ক্যাফের নিয়মিত কাস্টোমার । কখনো সাথে দু'এক বন্ধু আবার কখনো একা । ঢুকতে বের হতে হঠাৎ হঠাৎ চোখে চোখ পড়ে যাওয়া- ব্যাস এইটুকুই ।

একদিন হঠাৎ করেই তামীম হাসি হাসি মুখ করে এগিয়ে আসে " আপনাকে প্রায়ই দেখি । অধরা নির্লিপ্ত মুখে জিজ্ঞেস করে" দেখলে কি হয়েছে ?
তামীম একটু দমে গিয়ে বলে" না মানে একটু পরিচিত চাচ্ছিলাম । অধরা কঠিন মুখে সরাসরি নিষেধ করে " কোন দরকার নেই । বিব্রত তামীমও "আচ্ছা ঠিক আছে বলে পালিয়ে আসে ।  এরপরের দিন কাচুমাচু মুখ করে আবার উপস্থিত হয় অধরার টেবিলে  । অধরা দেখেই আবারো গম্ভীর হয়ে যায় " একবার বলেছি না পরিচিত হতে ইচ্ছুক নই ! " না মানে পরিচিত হতে আসিনি ।
তাহলে কি ?
"আসলে আমার এক বন্ধু আপনার প্রেমে পড়েছে, ও আপনার সাথে একটু কথা বলতে চায়' ।
কোন উত্তর না দিয়ে অধরা উঠে হাটতে শুরু করে  ।

দুদিন পর আবারো কাচুমাচু মুখে তামীমের আবির্ভাব । ওর মুখ দেখে রাগ করার বদলে এবার অধরা হেসে ফেলতে বাধ্য হয়। হাসতে হাসতেই জিজ্ঞেস করে " বলুন শুনি আজ কি বলতে এসেছেন ? হাসি দেখে তামীম একটু সাহস পায়" আমি আপনাকে ভালোবাসী ।

অধরা গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করে  "সেদিন না বললেন আপনার বন্ধু আমাকে ভালোবাসে ! আজ আপনি ভালোবাসেন !
তামীম বলে " না মানে আপনি সেদিন আমাকে যেভাবে ঝাড়লেন, আর কেউ আমাকে এত কঠিন করে এর আগে ধমক দেয়নি । তারপর থেকে শুধু আপনার ঝড়ি খেতে ইচ্ছে করছে ।

অধরা শুধু কঠিন মুখে বলে " আপনি আমার সাথে মজা করার সাহস কোথায় পেয়েছেন আমি জানি না । তবে ভবিষ্যতে না করলেই ভালো হবে  ।
তামীম দু হাতে কানে ধরে বলে উঠে " সরি সরি এই কানে ধরলাম । ক্ষমা চাই । একটু বসি আপনার সামনের চেয়ারটায় ?
কি ভেবে যেন অধরা রাজী হয়ে যায় ।
তামীম চুপচাপ বসে থাকে সামনে - কি বলবে ঠিক খুজে পায়না । সেদিনটা এমন করেই শেষ ।
দুদিন পর তামীম আবার আসে, দুজনের মাঝে হালকা কথাবার্তাও হয় ।
এভাবেই মাঝে মাঝে তামীম আসতো গল্প করতে । একসময় নাম্বার এক্সচেঞ্জ করে ওরা, তারপর রাত জেগে অনর্থক সব গল্প ।

তামীমকে এখনো অধরার ভালোবাসী কথাটা বলা হয়নি। অধরা জানে তামীম তার ব্যাপারে ভীষণ কেয়ারিং কিন্তু তামীমও কি বন্ধুর চেয়ে বেশী কিছু ভাবছে কিনা এই ব্যাপারে এখনো ও শিউর না । তাই জড়তা কাটিয়ে ভালোবাসী কথাটা বলা হয়ে উঠেনি এখনো । প্রতিবারই কথা শেষে লাইন কেটে গেলে অধরা ফোন হাতে ফিসফিস করে ভালোবাসী, ভালোবাসী , ভালোবাসী ।

প্রায়ই ভাবে আজ বলবো, কাল বলবো। শেষ পর্যন্ত বলা হয়না ।  হঠাৎ করেই তামীম জানায় দুদিন দেখা হবে না ।
"গ্রামের যাচ্ছি দিদার সাথে দেখা করতে ।  কথাও হবেনা - আব্বু যাচ্ছেন সাথে । টেক্সট করবো ।
"আচ্ছা যা । ভালোই ভালোই ফিরে আসিস ।
"আমি দুদিন না থাকলে তোর দেখা শুনা করবে কে গাধী ? খাওয়াদাওয়া না করে করেতো একদম মরে যাবি !
"আরে যাহ যাহ । তুই আসার আগে আমি বেছে ছিলাম না বুঝি !
"ও হ্যা তাইতো । বেচে ছিলিতো - ঠিকমত খাবি কিন্তু এ দুদিন । নাহয় আমি এসেই মাইর লাগাবো একদম ।
"খাবো তোর এত ভাবতে হবে না ।
বলেই অধরা মুখ ঘুরিয়ে নেয় । ইদানিং তার এ সমস্যা হচ্ছে - তামীমের সাথে একটু কথা বললে চোখ ভর্তি হয়ে যায় জলে । কি লজ্জার ব্যাপার । নিজেকে সামলাতে কষ্ট হয় । তামীমটা বুঝে ফেললে সর্বনাশ ।


অধরার স্পষ্ট মনে আছে সে সময়টা এখনো ।
" চারপাশে সবুজ আর সবুজ কি সুন্দর জায়গাটা বিশ্বাস করবি না । একদিন তোকে নিয়ে আসবো , আসবিতো আমার সাথে ? হুম আসবো ।
ওটাই ছিলো ওদের শেষ যোগাযোগ ।


এরপর থেকে আজ দুদিন তিনদিন চারদিন কেটে গেছে । কিন্তু তামীমের কোন খোজ নেই । অধরা অসংখ্য বার মেসেজ দিয়েছে , কল দিয়েছে । সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না ।

মোবাইল হাতে বারবার ইনবক্স চেক করছে অধরা । তামীমের কোন মেসেজ নেই । হঠাৎ করেই "your message has been delivered লিখাটা দেখে অধরা লাফিয়ে উঠে । কল দেয় । ওপাশ থেকে একটা মেয়ে রিসিভ করে "হ্যালো ? অধরা থমকে যায় । জিজ্ঞেস করে "এটা তামীমের নাম্বার না ? জি । আমি তার ছোট বোন ।
তামীম কোথায় ?
ভাইয়া দুদিন আগে গ্রামে যাওয়ার পথে রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছেন । ওপাশ থেকে ফুফিয়ে কান্নার শব্দ পাওয়া যায় ।
অধরার পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে আসে ।

ঘোরের মাঝে কতক্ষণ ছিলো অধরা জানেনা । ঝাপসা ঝাপসা কিছু ছবি চারদিকে , বান্ধবীদের উদ্বিগ্ন মুখ । মায়ের এসে হাত ধরে টেনে তোলা , স্টেশানে ঝিকঝিক রেলগাড়ি । পরিচিত পুরনো ঘর । সবকিছু চাপিয়ে তামীমের হঠাৎ হঠাৎ হাহাহা শব্দের ভরাট গলার হাসি । কোন সত্যি কোনটা স্বপ্ন ঠিক ধরতে পারেনা অধরা ।  আধ বছর শেষ অধরা কিছুতেই সুস্থ হয় না । সারাক্ষণ কাটে নিজের ঘরে চুপচাপ বসে থেকে ।

সহ্যের শেষ সীমায় এসে মাও তিক্ত হয়ে উঠেন । চড় দিয়ে বসেন অধরার গালে, তারপর অধরাকে জড়িয়ে ধরে নিজেই কাঁদতে বসেন । এই মেয়েটা তার বড় আদরের, কখনো গায়ে হাত তুলেন নি । আজ তাই করে বসেছেন রাগের বশে  ।

অধরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে । একটু একটু করে চারপাশটা দৃশ্যমান হয় অধরার কাছে । ছ মাস পর প্রথমবারের মতো ঢুকরে কেদে উঠে মেয়েটা । "আমি যে এখনো ভালোবাসী কথাটাও বলতে পারিনি মা । হাহাকার করে উঠে অধরা ।মা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন । অধরা কাঁদতেই থাকে, পৃথিবীর সব কান্না জমা হয়ে আছে ভিতরটায় ।
সেদিন থেকে অনেকদিন কেটে গেছে। হঠাৎ করেই অধরাকে ঘর থেকে বের হতে দেখা যায় । একটু একটু করে সামনে এগোয় সে ।

 মধ্যাহ্নের আকাশ জুড়ে থোকা থোকা কৃষ্ণচুড়া ফুল । বুক ভরে নিশ্বাস নেয় । তারপর তাকায় আকাশের দিকে -কতদিন আকাশ দেখা হয়না আমার ।  
"আমি ভালো থাকবো তামীম- তুইও ভালো থাকিস আকাশের ওপারের জগতটায়" ফিসফিস করে মেয়েটা ।  




Sunday, June 14, 2015

আমার আনোকা,
    তুমিতো জানোই তারাভরা আকাশ আমার অসম্ভব প্রিয়। জোছনারাত গুলোও আমার তত ভালো লাগেনা- যত ভালো লাগে আকশের বুকে মিটমিট করা তারাগুলো দেখতে ।

প্রায় রাতেই আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা তারাগুলো দেখি কিন্তু অদ্ভুত কথা কি জানো চোখ বুজলেই আমি দেখতে পাই হাজার হাজার তারার মাঝে তুমি দাঁড়িয়ে আছোচারপাশে পাশে ছিটিয়ে থাকা তারার মেলা মাঝখানে একলাই অসম্ভব সুন্দর তুমি হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকো
তোমায় ভালোবাসতে বাসতে আমার আকাশটাও যে কবে বদলে গেছে আমি বিন্দুমাত্র জানতে পাইনি জানো । মেঘলা আকাশেও আমার তোমাকে চাই, ঝুমঝুম বৃষ্টিতেও তোমার ছোয়া পাই- তুমি এতো দূর অথচ তোমায় ভাবলেই আমি যেখানে সেখানে রংধনু দেখতে পাই । 

আমিতো বরাবরই আধারের যাত্রী ছিলাম, তুমিই টেনে এনেছ আলোরেই পৃথিবীতে । এখন তোমায় ছাড়া কেমন করে থাকি বলো ! জানোতো তোমায় ছাড়া এতো আলোর ঝলমলে পৃথিবীটাও আমার অন্ধকারই লাগে।
জানি তুমিও অস্থির হয়ে আছো ফিরতে আমাদের একলার ভুবনটায় – কিন্তু কি করি বলো সমাজ নামের অদৃশ্য শেকলটা আষ্টেপিষ্ঠে বেধে রেখেছে সেই জন্ম থেকেই । পৃথিবীর সবাইকেই আমার শত্রু মনে হয় জানো-যখনি ভাবি তোমার সময়ের একটা সেকেন্ড মিনিটঘন্টা ওরা নিয়ে নিচ্ছে হিংসেয় জ্বালিয়ে দিতে ইচ্ছে করে সব । তোমার সময়,তোমার ছোয়া,তোমার পলক সবই কি শুধু আমার নয়! কেন তাতে অন্য কেউ ভাগ বসাবে বলো!

প্রিয় আনোকা তোমায় ছাড়া আমি যে বাচতে একদম পারবো না জানতো। প্রায়ই চোখ বুজে আমি তোমায় নিয়ে ভাবি, ভুল বললাম তোমার আমার ভবিষ্যটা ভাবি
আমার তোমার একান্তই নিজস্ব একটা ভুবন । সেখানে ঠিক তোমার চেহারার মিষ্টি একটা মেয়ের দোড়াদোড়ী– আমার আনোকা দ্যা সে\কেন্ড । বাইরে থেকে এলেই "পাপা" বলে ঝাপিয়ে পড়বে । আর তুমিও সব কাজ রেখে ছুটে আসবে, হাসিমুখে জানতে চাইবে সব ভালবাসা শুধু ওর জন্য? আমার ভাগ কোথায় ! তোমার ছোয়ার জন্য সারাদিন ভুবুক্ষ থাকা আমি তোমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলবো "জি না ম্যাডাম তোমার আগে কিচ্ছু না" ।

চিঠিটা লিখতে লিখতে আমি কিন্তু তোমায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, শেষ লাইনটা পড়েই তোমার মুখ লাল হয়ে উঠছে । তুমি চিঠিটা গালের সাথে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে আছ। তারপর ঠিক এই মুহূর্তে অবাক হয়ে চারপাশে কোথাও আমি আছি কিনা খুজছো তাই না ? পাগলী । আমার চিঠি পেলে তুমি কি কর আমার সব মুখস্ত আছেতো ।  

জানো তোমার লাগানো গাছটাতে অদ্ভুত নীল একটা ফুল ফু্টেছে, আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি । আমার ঘরে কখনো ফুল ফুটবে ভাবতেই পারিনা, জানোতো কোন কিছুর যত্ন নেয়া আমাকে দিয়ে হয়না। শুধু তোমার হাতে লাগানো বলেই রোজ পানি দেই । ফুলটা দেখতে খুব ইচ্ছে করছে তাইনা ? আমি কিন্তু ছবি পাঠাবো না । তুমি দ্রুত ফিরে আসো নাহয় ফুলটা ঝরে যাবেতো। ফুলের সাথে আমিও কিন্তু ঝরে যাবো বলে দিলাম, তোমায় ছাড়া বাচতে পারছিনা আর ।

তোমার

এরন 

The crushing sound of my heart made me realize once again,I am not over it. I still love him... His pain is killing me,. How can i calm h...