সাতসকালে উঠে টুথ পেস্টের টিউব নিয়ে গুতাগুতি করতে কার ভাল লাগে ! ভাল না লাগলেও সপ্তাহখানেক ধরে তমাল সেটাই করছে, প্রতিদিনই ভাবে দোকান থেকে ফিরতে নতুন পেস্ট নিয়ে আসবে, কিন্তু ভাবনা পর্যন্তই, ঘরে ফেরার আগে ব্যাপারটা ওর কখনো মনে পড়েনা । নানা কসরতে খানিকটা পেস্ট বের করে ব্রাশ শেষে বিরক্ত মেজাজে দোকানের দিকে পা বাড়ায় সে।
সাধের ঘুমটা বাদ দিয়ে সকাল সকাল দোকানে বসে থাকা পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য কাজগুলির একটা এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই ওর , এই সাতসকালে কোন কাস্টমারও আসেনা, কিন্তু বাবার ধারণা ভোরে ভোরে দোকান না খুললে দোকানের বরকত কমে যায় । বিরক্ত মুখে দোকান খুলতে খুলতে মেয়েটাকে চোখে পড়ল ওর । মুখ নিচু করে দোকানের পাশে দাড়িয়ে, গায়ে লম্বা চাদর জড়ানো, এত মগ্ন হয়ে কিছু ভাবছে যে তমালের আগমনও টের পায়নি। মেয়েটার মুখও দেখা যাচ্ছে না ভালভাবে , মেজাজ সামলে তমাল ভদ্রভাবেই জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করে - কিছু লাগবে আপনার আপু ?
চমকে উঠে মেয়েটা মুখ তুলে তাকালো । তমালের পৃথিবীটা হয়তো সেই মুহূর্তেই বদলে গিয়েছিল। মেয়েটার চোখ দুটো ফোলা ফোলা , সারারাত কেদেছে বোধহয় । কান্নার জল খানিকটা এখনো জমে আছে চোখে , মনে হচ্ছে টোকা দিলেই শিশির বিন্দুর মত গড়িয়ে পড়বে অশ্রুকণা । মেয়েটার চেহারা আহামরি কিছু না তবে এই মুহূর্তে তমালের মনে হচ্ছে মেয়েটার চোখের চেয়ে সুন্দর বোধহয় পৃথিবীতে আর কিছু নেই ।
জি একটা পেন্সিল কাটার আর দশটাকার মিঃম্যাঙ্গো দিন । আবারো চমকালো তমাল, চোখের মতই মেয়েটার কন্ঠটাও ভীষণ মিষ্টি । জিনিসগুলো তুলেই আগের মত মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায় মেয়েটা, দুদিন পর আবার এলো সেই চাদরের ঝুল টানতে টানতে , তারপর থেকে প্রায় আসা হতো মেয়েটার নানা ছোটখাটো দরকারে। পাশের ছাত্রী হোস্টেলটাতেই উঠেছে জিনাত । হুম জিনাত ওর নাম, চিটাগাং কলেজে ইতিহাসে ভর্তি হয়েছে ও । এতদিনে তমালের সাথে মোটামোটি পরিচয় হয়ে গেছে জিনাতের, প্রতিবারই কিছু কিনলে মিষ্টি হেসে থ্যাঙ্কিউ বলে ও । তমালের মনটা খুশীতে ভরে যায় ।
দোকান খোলার বিরক্তিকর কাজটাও এখন আর বিরক্তির মনে হয়না তমালের, বরং জিনাতের অপেক্ষায় থাকতে ভালই লাগে তার কাছে । বিকম পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়ে গেছে , বাবা এবার তাড়া দিচ্ছেন দোকান বাদ দিয়ে এমবিএ তে তাড়াতাড়ি ভর্তি হতে । কিন্তু দোকানে না এলেতো জিনাতের সাথে যোগাযোগ থাকবেনা আর, গড়িমসি করে ভর্তির সময় দেরি করতে লাগল তমাল। শেষমেশ বাবা বাধ্য হয়ে নিজে গিয়েই ভর্তি করালেন ওকে ।
সাধের ঘুমটা বাদ দিয়ে সকাল সকাল দোকানে বসে থাকা পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য কাজগুলির একটা এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই ওর , এই সাতসকালে কোন কাস্টমারও আসেনা, কিন্তু বাবার ধারণা ভোরে ভোরে দোকান না খুললে দোকানের বরকত কমে যায় । বিরক্ত মুখে দোকান খুলতে খুলতে মেয়েটাকে চোখে পড়ল ওর । মুখ নিচু করে দোকানের পাশে দাড়িয়ে, গায়ে লম্বা চাদর জড়ানো, এত মগ্ন হয়ে কিছু ভাবছে যে তমালের আগমনও টের পায়নি। মেয়েটার মুখও দেখা যাচ্ছে না ভালভাবে , মেজাজ সামলে তমাল ভদ্রভাবেই জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করে - কিছু লাগবে আপনার আপু ?
চমকে উঠে মেয়েটা মুখ তুলে তাকালো । তমালের পৃথিবীটা হয়তো সেই মুহূর্তেই বদলে গিয়েছিল। মেয়েটার চোখ দুটো ফোলা ফোলা , সারারাত কেদেছে বোধহয় । কান্নার জল খানিকটা এখনো জমে আছে চোখে , মনে হচ্ছে টোকা দিলেই শিশির বিন্দুর মত গড়িয়ে পড়বে অশ্রুকণা । মেয়েটার চেহারা আহামরি কিছু না তবে এই মুহূর্তে তমালের মনে হচ্ছে মেয়েটার চোখের চেয়ে সুন্দর বোধহয় পৃথিবীতে আর কিছু নেই ।
জি একটা পেন্সিল কাটার আর দশটাকার মিঃম্যাঙ্গো দিন । আবারো চমকালো তমাল, চোখের মতই মেয়েটার কন্ঠটাও ভীষণ মিষ্টি । জিনিসগুলো তুলেই আগের মত মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায় মেয়েটা, দুদিন পর আবার এলো সেই চাদরের ঝুল টানতে টানতে , তারপর থেকে প্রায় আসা হতো মেয়েটার নানা ছোটখাটো দরকারে। পাশের ছাত্রী হোস্টেলটাতেই উঠেছে জিনাত । হুম জিনাত ওর নাম, চিটাগাং কলেজে ইতিহাসে ভর্তি হয়েছে ও । এতদিনে তমালের সাথে মোটামোটি পরিচয় হয়ে গেছে জিনাতের, প্রতিবারই কিছু কিনলে মিষ্টি হেসে থ্যাঙ্কিউ বলে ও । তমালের মনটা খুশীতে ভরে যায় ।
দোকান খোলার বিরক্তিকর কাজটাও এখন আর বিরক্তির মনে হয়না তমালের, বরং জিনাতের অপেক্ষায় থাকতে ভালই লাগে তার কাছে । বিকম পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়ে গেছে , বাবা এবার তাড়া দিচ্ছেন দোকান বাদ দিয়ে এমবিএ তে তাড়াতাড়ি ভর্তি হতে । কিন্তু দোকানে না এলেতো জিনাতের সাথে যোগাযোগ থাকবেনা আর, গড়িমসি করে ভর্তির সময় দেরি করতে লাগল তমাল। শেষমেশ বাবা বাধ্য হয়ে নিজে গিয়েই ভর্তি করালেন ওকে ।
জিনাতের সাথে আর দেখা হবে না
ভাবতেই অসহ্য লাগছে সব, সামনেই ভালবাসা দিবস"সেদিন জিনাতকে ভালবাসি
বলবোই" মনে মনে ভেবে নেয় তমাল । কিন্তু ভালবাসি বলার সাহসটা আর হয়ে উঠে না ওর
, শেষমেশ নিজের অনুভূতিগুলো চিঠিতে জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় ও । যেই ভাবা সেই কাজ ১৪
ফেব্রুয়ারীর দিন হোস্টেলের দারোয়ানকে কিছু টাক দিয়ে জিনাতকে চিঠি দিয়ে আসতে রাজী
করিয়ে ফেলে তমাল । তারপর পাঠিয়ে দেয় ওর বুকের জমা করা সব আবেগ দিয়ে লিখা ভালবাসার
প্রথম নীল চিঠি ।
তারপর শুরু অপেক্ষার পালা,
কিন্তু জবাব আসে না । দারোয়ান চাচা হলফ করে বলেছেন চিঠিটা উনি নিজেই জিনাতের হাতে
দিয়েছেন । অস্থিরতায় পাগল হওয়ার অবস্থা ওর । আজ দুদিন পার হয়ে গেল, জিনাতের পক্ষ
থেকে বিন্দুমাত্র সাড়াশব্দ নেই । তারপর দিন বিকেলে ডিসি হিলের পাশের নার্সারিটায়
হঠাৎ দেখা হয়ে গেল জিনাতের সাথে, আগের মতই মিষ্টি হেসে ও কেমন আছে জানতে চায়
জিনাত। সম্ভাষণ শেষ হতেই আচ্ছা এবার আসি বলে পা বাড়াতেই তমাল মরিয়া হয়ে জিজ্ঞেস করে - আমার চিঠিটা ? থমকে দাড়িয়ে জিনাত মাথা নিচু করে বলে আমি পাঠিয়ে দিবো ।
হতভম্ব তমাল কিছু ভাবার আগেই ওর জিনাত চলে যায় । উদ্দেশ্যহীনের মত কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে তমালও বাসায় ফিরে । তারপর আবার দিন কাটতে থাকে, জিনাতের পক্ষ থেকে কোন সাড়াশব্দ নেই । হঠাৎ করেই চারদিনের মাথায় একটা বাচ্চা এসে ওর পাঠানো চিঠিটাই ওর হাতে দিয়ে যায়, জিনাত আপু দিয়েছেন বলে । মুহূর্তে পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে আসে ওর, গলার কাছে পাকিয়ে থাকা কান্নাগুলো গিলে নিয়ে চিঠিটা ডাস্টবিনে ফেলতে গিয়েও কি মনে করে খুলে তমাল । অবাক হয়ে দেখে ভিতরে কোন চিঠি নেই । শুধু খামের ত্রিকোন কোণটায় লিখা ঃ- হুম ।
বিশ্বাস হতে চায়না ওর বারবার খাম উলটে পাল্টে দেখে, নিজের মনে পাগলের মত হেসে উঠে তমাল। চোখের জলে ঝাপসা হয়ে উঠা চারপাশটায় শুধু রঙ্গীন প্রজাপতির মেলা ।
সেদিনের পর ১৪বছর পার হয়ে গেছে, পাশেই মেঘাকে জড়িয়ে ধরে এলোমেলো চুলে ঘুমাচ্ছে পাগলীটা । সেই চিঠি আর খাম দুটোয় অতি যত্নে তোলা আছে আলমারির ছোট্ট গোপন বক্সটায় । সেদিকে পা বাড়ায় তমাল। মৃদু হেসে হাজার বার পড়া চিঠিটা আবার পড়ে ফিরে আসে রুমে ও। জিনাতের গালে হাত ছোয়াতেই ও ঘুম ঘুম চোখ মেলে প্রশ্ন করে- কোথায় গিয়েছিলে তুমি ? জানোনা ঘুম ভেঙ্গে তোমাকে সাথে সাথে দেখতে না পেলে অস্থির লাগে আমার ! মুচকি হেসে- এইতো আমি পাশেই আছি পরী বলে জিনাতের কপালে চুমু খায় তমাল ।
এই গল্পের কোন শেষ নেই, ওদের ভালবাসাবাসির গল্পটা চলতেই থাকে। ভালবাসার চার বছরের মাথায় নীল খামে - Will you Marry me লিখা ছোট্ট একটি চিরকুট পাঠায় জিনাত ।সাথে দুটো আংটি । সেই থেকে শুরু দুজনের স্বপ্নের সংসার গড়ার গল্প । বাকী সবার মত ওদেরও করতে হয়েছে স্বপ্নছোয়ার যুদ্ধ কিন্তু সব বাধা পেরিয়ে এখন মেঘাকে নিয়ে দুজনের ভালবাসার ছোট্ট নীড়টা মায়াময় হাসিতে ভরে গেছে ।
পাঠকের সুবিধার্থে তমালের চিঠিটা তুলে দেয়া হলো -
প্রিয় জিনাত,
ভালবাসা অথবা তার সংজ্ঞা কোনটাই আমার জানা নেই , তারপরও তোমাকে দেখার পর আমার ছোট্ট একটা সংসার গড়ার স্বপ্নটা দিন দিন সব সত্যের চেয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে । তোমার সাথে বারান্দায় দাড়িয়ে দিনের প্রথম চা খাওয়া ... হঠাৎ হঠাৎ তোমাকে নিয়ে অনেক দূরে লং ড্রাইভে যাওয়া ।
তোমার সব ছোট্ট ছোট্ট চাওয়াগুলোর পূর্ণতা শেষে তোমার মিষ্টি হাসিতে আমার ভুবনটা ঝলমল করে উঠা । সবগুলো স্বপ্ন শেষে তোমার মায়াময় চোখে চোখ রেখে ভালবাসি বলা । জ্যোৎস্না রাতের রূপালী আলোয় তোমার পাশে সারারাত বসে থাকা । আবার নক্ষত্রের রাতগুলোয় দুজন একসাথে তারা দেখতে দূরে কোথাও ছুট দেয়া ।
চাইলেই তোমার হাত দুটো ধরতে পারা, তোমার কন্ঠে পরীর মত রিনিঝিনি শব্দে ভালবাসি শুনতে পাওয়া । সবই এখন আমার ছোট্ট জীবনটার বড় বড় অংশ হয়ে গেছে । একবার কি আমার হাত ধরবে তুমি ? হবে শুধু আমার পরী ?
ইতি
তোমার তমাল
No comments:
Post a Comment