সাদিকের হাত ধরে এতটা পথ আসাটা আমার জন্য মোটেও সহজ ছিলনা, সেই প্রথম থেকেই সাদিক একটু মুডি আর ভীষণ লাজুক । নিজের জড়তা কাটিয়ে ওর সাথে কথা বলবো এই সাহস আমার হয়নি কিছুতেই তাই , তাই সব ভাললাগা লুকিয়ে রেখে দূর থেকে তাকিয়ে থাকাতেই তৃপ্ত ছিলাম আমি ।
প্রথম যেদিন সাদিক আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো- আপনি প্রায় আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন তাই না ? লজ্জা ভয় দুটোই একসাথে আচ্ছন্ন করেছিল আমাকে । মাটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অজান্তে কখন কাঁদতে শুরু করেছি নিজেও বুঝতে পারিনি । বিব্রত সাদিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলার মত খুজে পাচ্ছিলনা কিছু। একি কথাই বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলছিল- আমি অত্যন্ত দুঃখিত, সরি সরি ।
তারপর নিজে থেকেই স্বীকার করলো আসলে ও আমার সাথে কথা বলার এক্সিউজ খুজতেই এই কথাটা বলেছে । ওর এই কথা শুনে কান্নার মাঝেই হেসে ফেলতে বাধ্য হয়েছি আমি, আমাকে হাসতে দেখেই ও জিজ্ঞেস করলো - আমি কি ক্যান্টিনে আপনার সাথে এক কাপ চা খেতে পারি ?
আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম।
চা খেতে খেতে হুট করে বললো " তোমার যে সাদা জামাটা আছে ওটা পরলে তোমাকে একদম পরীর মত লাগে । মনে হয় চারপাশ থেকে একগুচ্ছ শুভ্রতা স্বর্গের কোন পরীকে জড়িয়ে রেখেছে । প্রথমবার তোমাকে আমি ওই সাদা ড্রেসটাতেই দেখেছিলাম ।
আমি মনে মনে বলছিলাম " তোমার কিচ্ছু মনে নেই সাদিক । আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো এডমিশান টেস্টের দিন । প্রশ্ন দেখেই ভয়ে কিচ্ছু লিখতে পারছি না। তুমিই তখন বললে " এত ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই । আপনি নিশ্চয় পাস করবেন ।
সেই তখন থেকেই আমার চোখ দুটো তোমাকে সারাক্ষণ অনুসরণ করেছে । নিজের অজান্তে কখন মায়ায় আবদ্ধ হয়েছি ঠিক জানিনা । তুমি কবে কোন রঙের টি-শার্ট পরেছ , কবে একলা ক্যান্টিনে এসেছ । কখন কোন মেয়ের সাথে কথা বলেছ সব আমার ডায়রীতে আছে । এতগুলো দিন প্রতিক্ষার পর তুমি আমার দুয়ারে এলে তোমাকে আমি কিছুতেই ফিরতে দেবো না ।
তারপর শুরু একসাথে পথ চলার । একসাথে ঘুরতে যাওয়া ফ্রেন্ড সার্কেলের দুষ্টামিতে গাল লাল করে ফেলা । প্রথমবার ভুলের ভান করে হাত ধরা । তারপর অভ্যস্ততার এক্সিউজ । কয়েকমাসের মাথায় হঠাৎ একদিন সাদিক হঠাৎ করেই বলে বসলো "চলো মুনা আমরা বিয়ে করে ফেলি । তোমাকে ফেলে বাসায় গেলে সারাক্ষণ শুন্য লাগে । একসাথে বাসায় ফিরবো এখন থেকে ।
কোনভাবে মাথা নেড়ে সায় দিলাম । সত্যি বলতে তখন শুধু ভেবেছি সাদিককে আমি ভালোবাসি , ভীষণ ভালোবাসী । আর কিচ্ছু মাথায় আসেনি, ভবিষ্যত পরিবার কোন কিছুই মাথায় আসেনি । আর ভেবেছি একসাথে থাকবো । এই আনন্দের কাছে বাকী সব তুচ্ছ লাগছিলো ।
তারপর কয়েকজন বন্ধু নিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে দুজনে বিয়ে করে ফেললাম । সব শেষে সাদিকের হাত ধরে তার বাসায় । যা হবার তাই হলো -তার পরিবার কিছুতেই মেনে নিলো না আমাদের । সাদিকের হাত ধরে পথে নেমে এলাম । চন্দ্রাকে কল দিতেই জানলাম - সাদিকের পরিবার আমার বাসায় কল দিয়েছিলো ।
আরেকদফা ঝড় বয়ে গেছে ওখানেও, ফিরে যাওয়ার জায়গা নেই আর । রাতটা কোনভাবে এক হোটেলে কাটিয়ে পরেরদিন ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া নিলাম আমরা । সাদিক পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে এক বন্ধুর ব্যাবসায় সাহায্য করতে লেগে গেল । আমিও বসে না থেকে পাড়ার দু একটা বাচ্চাকে পড়াতে শুরু করলাম ।
সাদিকের বন্ধুর ব্যাবসায় অল্প যা কিছু লাভ হয় সাথে আমার টিউশানীর কিছু টাকা মিলিয়ে সংসার চালানোটা কষ্টকর নয় শুধু অসম্ভবের কাছাকাছি ছিলো । মাসের প্রথম কয়েকটা দিন পার হতেই হাত খালি , বাড়ি ভাড়া দিয়ে বাজার করার টাকা আর থাকছে না । এটা ওটা নিয়ে সাদিকের সাথে রোজ আমার ঝগড়া হতে লাগলো । তার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার দোষে বারবার আমাকেই দায়ী করতে লাগলো । আমিও দায়ী করছি আমার জীবনটা নষ্ট করে দেয়ার জন্য । হুট করে শুনতে পেলাম আমাদের এক ফ্রেন্ড ওকে অন্য মেয়ের সাথে রিকশায় যেতে দেখেছে । বেচে থাকার ইচ্ছেই নষ্ট হয়ে গেলো আমার ।
তিক্ততা সীমা ছাড়িয়ে গেলো । এক পর্যায়ে আমরা কেউ আর কাউকে সহ্য করতে পারছি না । বারবার মনে হতে লাগলো বিয়ে করার সিদ্ধান্তটাই ছিলো সবচেয়ে বড় ভুল জীবনের । ব্যাবসায় লসের পর লস দিতে দিতে ক্লান্ত সাদিক একদিন বললো আমিই নাকি অপয়া, তার জীবনে এসে সব নষ্ট করে দিয়েছি । বাবাকে ফোন দিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছি । বাবা খানিক্ষণ গম্ভীর থেকে জানতে চাইলেন ফিরে আসবি ?
কাঁদতে কাঁদতে বললাম "বাবা আমাকে নিয়ে যাও । আমি আর পারছি না । সে রাতে সাদিক ফিরলো , রোজকার মতো দুজন দুদিকে ফিরে শুয়ে আছি । বললাম আমি কাল বাবার কাছে ফিরে যাচ্ছি, এবার তোমার জীবন তুমি গুছিয়ে নিয়ো। সাদিক কিচ্ছু বলেনি তবে কেপে কেপে উঠা পিঠ দেখে বুঝতে পারছিলাম - কাঁদছে ও ।
দুজন দুদিকে মুখ করে কাঁদছি । ছোট্ট রাতটা খনিকেই পুরিয়ে গেলো ।
সকালে উঠে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে গেলাম। ও একবারো বাধা দেয়নি । আমরা দুজনেই তখন জানতাম বাধা দিয়ে লাভ নেই, এভাবে হয় না । দিন যত যাবে এই পরিস্থিতিতে শুধু তিক্ততাই বাড়বে । মানুষের জীবন শুধু ভালোবাসা দিয়ে চলে না । ফিরে গেলাম বাবার কাছে , আবার কলেজে ভর্তি হলাম । কিন্তু দিন কাটেনা আর ।
চারদিকে অসীম শুন্যতা । দিনদিন বিষন্ন হয়ে পড়ছি আগের চেয়েও বেশী । নিজের নিঃশ্বাসকে বোঝা মনে হতে লাগলো । কিভাবে একবছর কেটে গেলো নিজেও জানিনা । সাদিকের ব্যাপারে কেউ আমার সাথে কথা বলে না। বাবাই নিষেধ করেছেন হয়তো । উড়ো উড়ো শুনতে পাই সাদিকের বন্ধুর ব্যাবসা খুব ভালো চলছে । সাদিক এখন প্রচুর টাকা আয় করে । একবার শুনলাম বিয়েও করেছে ।
ততদিনে আমার আর কিচ্ছুতে কিছু যায় আসেনা , নিজেকে জীবন্মৃত মনে হতো । পড়াশুনাও ছেড়ে দিয়েছি । কলেজ যেতে ভালো লাগে না আর । পাপের ভয়ে আত্মহত্যা করিনি । শুধু চলছে জীবন নিস্তব্ধতায় ।
সেদিন সকাল থেকেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিলো । রোজকার মতো জানালার গ্রীল ধরে শূন্য চোখে বাইরে তাকিয়ে আছি । বাবা ডাকলেন "মুনা বসার ঘরে একটু আয়তো মা । বসার ঘরে ঢুকেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি - চকলেট কালারের ডাবল সোফাটায় সাদিক বসে আছে । কঠিন দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকালাম । বাবা হড়বড় করে বললেন তোরা দুজনে কথা বল - আমি আসছি ।
বাবা চলে যেতেই সাদিককে বললাম "তুমি চলে যাও - তোমার সাথে আমার কোন কথা থাকতে পারে না।
সাদিক অনুনয় করে বললো "মুনা প্লিজ একটা কথা শুনো আমার। আমি বেশীক্ষণ সময় নিবো না ।
পরিষ্কার বুঝতে পারছি মুখে বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠেছে আমার । সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলাম "নিজের ওয়াইফকে জানিয়ে এসেছতো ? নাকি তার সাথেও প্রতারণা করার ইচ্ছে ?!
সাদিক অবাক হয়ে জানতে চাইলো "কিসের ওয়াইফ ?কার কথা বলছো !
আমিও এবার অবাক হয়ে জানতে চাইলাম "তুমি না বিয়ে করেছ ?
সাদিক আরো অবাক হয়ে উত্তর দিলো " কি সব বলছো ? আমার ওয়াইফতো তুমি । আমাদেরতো এখনো ডিভোর্স হয়নি । আমি আবার বিয়ে করবো কি করে !
উত্তরে কিছু বলার খুজে না পেয়ে চুপচাপ অন্যদিকে তাকিয়ে আছি । সাদিকই পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো । আমার হাত ধরে বললো "প্লিজ ফিরে চলো মুনা । গত একবছর আমি একটা রাতও ঠিক করে ঘুমাতে পারিনি । সারাক্ষণ তোমাকে ভেবেছি । নিজেকে তৈরী করে কবে তোমার কাছে ফিরবো প্রতিদিন সে দিনের অপেক্ষা করেছি । তোমাকে ছাড়া আমি বাচতে পারবো না মুনা । আর অপেক্ষা করতে হলে আমি সত্যিই মরে যাবো ।
চোখের জল কিছুতেই বাধ মানলো না । সাদিককে ছাড়া আমারো যে কিছুতেই চলবেনা তা আমার চেয়ে ভালো আর কে জানবে ! দুহাতে আমার গাল ধরে ঠোটে ঠোট বসালো সাদিক । আমাদের দুজনের অশ্রু এক হয়ে মিশে যাচ্ছে । অশ্রুজলে পবিত্র হোক এ ভালোবাসা ।
প্রথম যেদিন সাদিক আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো- আপনি প্রায় আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন তাই না ? লজ্জা ভয় দুটোই একসাথে আচ্ছন্ন করেছিল আমাকে । মাটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অজান্তে কখন কাঁদতে শুরু করেছি নিজেও বুঝতে পারিনি । বিব্রত সাদিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলার মত খুজে পাচ্ছিলনা কিছু। একি কথাই বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলছিল- আমি অত্যন্ত দুঃখিত, সরি সরি ।
তারপর নিজে থেকেই স্বীকার করলো আসলে ও আমার সাথে কথা বলার এক্সিউজ খুজতেই এই কথাটা বলেছে । ওর এই কথা শুনে কান্নার মাঝেই হেসে ফেলতে বাধ্য হয়েছি আমি, আমাকে হাসতে দেখেই ও জিজ্ঞেস করলো - আমি কি ক্যান্টিনে আপনার সাথে এক কাপ চা খেতে পারি ?
আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম।
চা খেতে খেতে হুট করে বললো " তোমার যে সাদা জামাটা আছে ওটা পরলে তোমাকে একদম পরীর মত লাগে । মনে হয় চারপাশ থেকে একগুচ্ছ শুভ্রতা স্বর্গের কোন পরীকে জড়িয়ে রেখেছে । প্রথমবার তোমাকে আমি ওই সাদা ড্রেসটাতেই দেখেছিলাম ।
আমি মনে মনে বলছিলাম " তোমার কিচ্ছু মনে নেই সাদিক । আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো এডমিশান টেস্টের দিন । প্রশ্ন দেখেই ভয়ে কিচ্ছু লিখতে পারছি না। তুমিই তখন বললে " এত ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই । আপনি নিশ্চয় পাস করবেন ।
সেই তখন থেকেই আমার চোখ দুটো তোমাকে সারাক্ষণ অনুসরণ করেছে । নিজের অজান্তে কখন মায়ায় আবদ্ধ হয়েছি ঠিক জানিনা । তুমি কবে কোন রঙের টি-শার্ট পরেছ , কবে একলা ক্যান্টিনে এসেছ । কখন কোন মেয়ের সাথে কথা বলেছ সব আমার ডায়রীতে আছে । এতগুলো দিন প্রতিক্ষার পর তুমি আমার দুয়ারে এলে তোমাকে আমি কিছুতেই ফিরতে দেবো না ।
তারপর শুরু একসাথে পথ চলার । একসাথে ঘুরতে যাওয়া ফ্রেন্ড সার্কেলের দুষ্টামিতে গাল লাল করে ফেলা । প্রথমবার ভুলের ভান করে হাত ধরা । তারপর অভ্যস্ততার এক্সিউজ । কয়েকমাসের মাথায় হঠাৎ একদিন সাদিক হঠাৎ করেই বলে বসলো "চলো মুনা আমরা বিয়ে করে ফেলি । তোমাকে ফেলে বাসায় গেলে সারাক্ষণ শুন্য লাগে । একসাথে বাসায় ফিরবো এখন থেকে ।
কোনভাবে মাথা নেড়ে সায় দিলাম । সত্যি বলতে তখন শুধু ভেবেছি সাদিককে আমি ভালোবাসি , ভীষণ ভালোবাসী । আর কিচ্ছু মাথায় আসেনি, ভবিষ্যত পরিবার কোন কিছুই মাথায় আসেনি । আর ভেবেছি একসাথে থাকবো । এই আনন্দের কাছে বাকী সব তুচ্ছ লাগছিলো ।
তারপর কয়েকজন বন্ধু নিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে দুজনে বিয়ে করে ফেললাম । সব শেষে সাদিকের হাত ধরে তার বাসায় । যা হবার তাই হলো -তার পরিবার কিছুতেই মেনে নিলো না আমাদের । সাদিকের হাত ধরে পথে নেমে এলাম । চন্দ্রাকে কল দিতেই জানলাম - সাদিকের পরিবার আমার বাসায় কল দিয়েছিলো ।
আরেকদফা ঝড় বয়ে গেছে ওখানেও, ফিরে যাওয়ার জায়গা নেই আর । রাতটা কোনভাবে এক হোটেলে কাটিয়ে পরেরদিন ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া নিলাম আমরা । সাদিক পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে এক বন্ধুর ব্যাবসায় সাহায্য করতে লেগে গেল । আমিও বসে না থেকে পাড়ার দু একটা বাচ্চাকে পড়াতে শুরু করলাম ।
সাদিকের বন্ধুর ব্যাবসায় অল্প যা কিছু লাভ হয় সাথে আমার টিউশানীর কিছু টাকা মিলিয়ে সংসার চালানোটা কষ্টকর নয় শুধু অসম্ভবের কাছাকাছি ছিলো । মাসের প্রথম কয়েকটা দিন পার হতেই হাত খালি , বাড়ি ভাড়া দিয়ে বাজার করার টাকা আর থাকছে না । এটা ওটা নিয়ে সাদিকের সাথে রোজ আমার ঝগড়া হতে লাগলো । তার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার দোষে বারবার আমাকেই দায়ী করতে লাগলো । আমিও দায়ী করছি আমার জীবনটা নষ্ট করে দেয়ার জন্য । হুট করে শুনতে পেলাম আমাদের এক ফ্রেন্ড ওকে অন্য মেয়ের সাথে রিকশায় যেতে দেখেছে । বেচে থাকার ইচ্ছেই নষ্ট হয়ে গেলো আমার ।
তিক্ততা সীমা ছাড়িয়ে গেলো । এক পর্যায়ে আমরা কেউ আর কাউকে সহ্য করতে পারছি না । বারবার মনে হতে লাগলো বিয়ে করার সিদ্ধান্তটাই ছিলো সবচেয়ে বড় ভুল জীবনের । ব্যাবসায় লসের পর লস দিতে দিতে ক্লান্ত সাদিক একদিন বললো আমিই নাকি অপয়া, তার জীবনে এসে সব নষ্ট করে দিয়েছি । বাবাকে ফোন দিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছি । বাবা খানিক্ষণ গম্ভীর থেকে জানতে চাইলেন ফিরে আসবি ?
কাঁদতে কাঁদতে বললাম "বাবা আমাকে নিয়ে যাও । আমি আর পারছি না । সে রাতে সাদিক ফিরলো , রোজকার মতো দুজন দুদিকে ফিরে শুয়ে আছি । বললাম আমি কাল বাবার কাছে ফিরে যাচ্ছি, এবার তোমার জীবন তুমি গুছিয়ে নিয়ো। সাদিক কিচ্ছু বলেনি তবে কেপে কেপে উঠা পিঠ দেখে বুঝতে পারছিলাম - কাঁদছে ও ।
দুজন দুদিকে মুখ করে কাঁদছি । ছোট্ট রাতটা খনিকেই পুরিয়ে গেলো ।
সকালে উঠে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে গেলাম। ও একবারো বাধা দেয়নি । আমরা দুজনেই তখন জানতাম বাধা দিয়ে লাভ নেই, এভাবে হয় না । দিন যত যাবে এই পরিস্থিতিতে শুধু তিক্ততাই বাড়বে । মানুষের জীবন শুধু ভালোবাসা দিয়ে চলে না । ফিরে গেলাম বাবার কাছে , আবার কলেজে ভর্তি হলাম । কিন্তু দিন কাটেনা আর ।
চারদিকে অসীম শুন্যতা । দিনদিন বিষন্ন হয়ে পড়ছি আগের চেয়েও বেশী । নিজের নিঃশ্বাসকে বোঝা মনে হতে লাগলো । কিভাবে একবছর কেটে গেলো নিজেও জানিনা । সাদিকের ব্যাপারে কেউ আমার সাথে কথা বলে না। বাবাই নিষেধ করেছেন হয়তো । উড়ো উড়ো শুনতে পাই সাদিকের বন্ধুর ব্যাবসা খুব ভালো চলছে । সাদিক এখন প্রচুর টাকা আয় করে । একবার শুনলাম বিয়েও করেছে ।
ততদিনে আমার আর কিচ্ছুতে কিছু যায় আসেনা , নিজেকে জীবন্মৃত মনে হতো । পড়াশুনাও ছেড়ে দিয়েছি । কলেজ যেতে ভালো লাগে না আর । পাপের ভয়ে আত্মহত্যা করিনি । শুধু চলছে জীবন নিস্তব্ধতায় ।
সেদিন সকাল থেকেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিলো । রোজকার মতো জানালার গ্রীল ধরে শূন্য চোখে বাইরে তাকিয়ে আছি । বাবা ডাকলেন "মুনা বসার ঘরে একটু আয়তো মা । বসার ঘরে ঢুকেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি - চকলেট কালারের ডাবল সোফাটায় সাদিক বসে আছে । কঠিন দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকালাম । বাবা হড়বড় করে বললেন তোরা দুজনে কথা বল - আমি আসছি ।
বাবা চলে যেতেই সাদিককে বললাম "তুমি চলে যাও - তোমার সাথে আমার কোন কথা থাকতে পারে না।
সাদিক অনুনয় করে বললো "মুনা প্লিজ একটা কথা শুনো আমার। আমি বেশীক্ষণ সময় নিবো না ।
পরিষ্কার বুঝতে পারছি মুখে বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠেছে আমার । সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলাম "নিজের ওয়াইফকে জানিয়ে এসেছতো ? নাকি তার সাথেও প্রতারণা করার ইচ্ছে ?!
সাদিক অবাক হয়ে জানতে চাইলো "কিসের ওয়াইফ ?কার কথা বলছো !
আমিও এবার অবাক হয়ে জানতে চাইলাম "তুমি না বিয়ে করেছ ?
সাদিক আরো অবাক হয়ে উত্তর দিলো " কি সব বলছো ? আমার ওয়াইফতো তুমি । আমাদেরতো এখনো ডিভোর্স হয়নি । আমি আবার বিয়ে করবো কি করে !
উত্তরে কিছু বলার খুজে না পেয়ে চুপচাপ অন্যদিকে তাকিয়ে আছি । সাদিকই পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো । আমার হাত ধরে বললো "প্লিজ ফিরে চলো মুনা । গত একবছর আমি একটা রাতও ঠিক করে ঘুমাতে পারিনি । সারাক্ষণ তোমাকে ভেবেছি । নিজেকে তৈরী করে কবে তোমার কাছে ফিরবো প্রতিদিন সে দিনের অপেক্ষা করেছি । তোমাকে ছাড়া আমি বাচতে পারবো না মুনা । আর অপেক্ষা করতে হলে আমি সত্যিই মরে যাবো ।
চোখের জল কিছুতেই বাধ মানলো না । সাদিককে ছাড়া আমারো যে কিছুতেই চলবেনা তা আমার চেয়ে ভালো আর কে জানবে ! দুহাতে আমার গাল ধরে ঠোটে ঠোট বসালো সাদিক । আমাদের দুজনের অশ্রু এক হয়ে মিশে যাচ্ছে । অশ্রুজলে পবিত্র হোক এ ভালোবাসা ।
No comments:
Post a Comment