আচ্ছা তোমার কি মনে আছে এইযে সেদিন তোমার সাথে দেখা করতে বনশ্রী হোটেলের পাশের ছোট্ট চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিক্ষা করছিলাম তোমার , সাদা শার্টটা পরে গেলাম তোমার প্রিয় রঙ ভেবেই।
তুমি এলে খুব সাধারণ সুতোর হালকা গোলাপী থ্রি পিস পরে, এই সাধারণ জামাটাতেই তোমাকে কি অসাধারণ লাগছিল জানো ! আমার মনে হচ্ছিল বুকের খাচা থেকে হৃৎপিণ্ডটা বুঝি এখনি ছিটকে বেরিয়ে আসবে ... মুগ্ধ দৃষ্টিটা লুকাতে আমার যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে, গোলাপী রঙটা তোমাকে খুব মানায় ...
তুমি এসেই আমার শাদা শার্ট দেখে ভীষণ খুশী হয়ে উঠলে তারপরও একটু একটু মুখ ফুলিয়ে বলছিলে, তোমার ড্রেসকোড আমার সাথে একদমি মিলছেনা কেন - তুমি গোলাপী প্যান্ট পরে আসতে পারোনি আমার সাথে মিলিয়ে ! আমি হাসতে হাসতে বলেছিলাম কি যে বল না তুমি ছেলেরা কখনো গোলাপী প্যান্ট পরে ! ? তুমিও হেসে ফেললে এরপর বললে তোমাকে গোলাপী প্যান্টে কল্পনা করতে আসলেই ভীষণ অদ্ভুত লাগছে থাক গোলাপী প্যান্ট না আমি তোমার শার্টের হাতায় গোলাপী রঙের ফুল তুলে দিবো, বলেই মিট মিট করে অন্য দিকে তাকিয়ে হাসছিলে...
আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম- আমার শার্টে হাত দিবেনা বলছি... তুমি খিলখিল করে হেসে উঠে বললে- দিবো অবশ্যই দিবো, তোমার সবকিছুতে আমার absolute অধিকার ... এতো মিষ্টি করে তুমি অধিকারের কথা বললে আমার কিযে ভাল লাগছিল মনে হচ্ছিল বুকের মাঝে বুঝি মেঘগুলো সব হালকা পালক হয়ে উড়ে যাচ্ছে ... আমি হাসতে হাসতে তোমার হাত ধরে বললাম ঠিক আছে ঠিক আছে। আর বাচ্চাদের মত জিদ ধরতে হবেনা চলো খেতে যাই , ক্ষিদেয় পেটে ছুঁচো দোড়াদোড়ি করছে... তুমি আবারো হেসে গড়িয়ে পড়ে জিজ্ঞেস করলে ছুঁচো কি ? আমিও আবার কপট রাগ দেখিয়ে বললাম - জানিনা কি !
চলতো এখন আমরা যাই, তারপর বনশ্রীতে খেয়েই রিকশা নিলাম- তুমি বাচ্চাদের মত হেসে বলছিলে আজ কিন্তু আমরা সারাদিন রিকশাতে ঘুরবো আর কিচ্ছুনা ... দিন শেষে ডুবি ডুবি সূর্যের সাথে তোমারো সময় ফুরিয়ে এলো আমার সাথে থাকার , তুমি ফিরার জন্য হাটতে শুরু করলে পিছনে দাঁড়িয়ে আমি চোখের জল আড়াল করার চেষ্টা করছি...
প্রতিবারই তুমি ফিরে গেলে আমার এমন হয় জানো , নিজের ভিতরটা ভীষণ ফাকা লাগে... মনে হয় তোমাকে যদি বুকের ভিতরটায় ভরে রাখতে পারতাম হয়ত আমার এই শুন্যতা চলে যেত ... একদমি যেতে দিতে ইচ্ছে করেনা , আবার মাঝে মাঝেই মনে হয় ইশ মানিব্যাগটার মত যদি তোমাকে পকেটে রেখে দিতে পারতাম ! বারবার বলে দিলাম বাসায় গিয়েই কিন্তু কল করে জানাবে আমাকে ... তুমি দুষ্ট হাসি ঠোটের কোণে ঝুলিয়ে মাথা ঝাকিয়ে বলছিলে ইয়েস স্যার অবশ্যই কল দিবো।
কিন্তু কল আর আসেনা,তোমাকে কল করার চেষ্টা যতবারই করি , বারবার একি মেসেজ শুনতে পাই< এই মুহূর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না > ভয়ে আতঙ্কে আমার মাথা খারাপের যোগাড়... রাতের দশটায় তুমি কল করে ঠিক যেন মৃত মানুষের গলায় বললে হাসান আমার বিয়ে হয়ে গেছে... আমাকে আর কল করোনা... বলেই কেটে দিলে আমার সমস্ত পৃথিবী চোখের সামনে দুলে উঠলো।্বারবার কল দিয়ে আর কখনো খোলা পাইনি সেই নাম্বার। তোমার ছোট বোনকে কল দিয়ে জানতে পারলাম তোমাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়েছে...
কে জানতো সেদিনের সেই দেখাটা আমাদের শেষ দেখা- আর কখনো তোমার হাত ধরে হাটা হবেনা আমার, হবেনা তোমার সাথে রিকশায় সারাদিন ঘুরাঘুরি শেষে তোমাকে বিদায় দেয়া... এখন আমি একা একাই হাটি আমার নিঃসীম শুন্যতাকে বুকের মাঝে নিয়ে । মাঝে মাঝেই বিধাতার উপর রাগ করি তিনি কেন তোমাকে আমার হৃৎপিণ্ডের খাঁচায় বন্দী করে দেননি ... তারপর আবার ক্লান্ত হয়ে তোমার স্মৃতির কাছে আশ্রয় খুজি ...
No comments:
Post a Comment